Home অর্থনীতি কৃষকদের সুখবর দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক

কৃষকদের সুখবর দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক


কৃষকদের সুখবর দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় কৃষকের জন্য প্রণোদনা হিসেবে কৃষি ঋণে সুদের হার কমানো হয়েছে।

চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে কৃষি ঋণের জন্য কৃষককে ৪ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে, যেখানে এতদিন ৯ শতাংশ পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছিল।

সোমবার (২৭ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ থেকে জারি করা এক সার্কুলার থেকে এ তথ্য জানা যায়। এর আগে গত ১২ এপ্রিল এক ভিডিও কনফারেন্সে কৃষকের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

এর পরপরই কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহের লক্ষ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৮ মাস (৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ) মেয়াদী এ ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার হবে ৪ শতাংশ।

ঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার ৯ শতাংশ। কিন্ত মহামারী নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় কৃষকের অনুকূলে প্রণোদনা সুবিধার আওতায় শস্য ও ফসল খাতে সুদহার কমিয়ে ৪ শতাংশ (রেয়াতি সুদ) নির্ধারণ করা হয়েছে। সব কৃষকই এ সুবিধার আওতায় ঋণ পাবেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, আগামীতে খাদ্যের উৎপাদন ও খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে কৃষি খাতে শস্য ও ফসল চাষের জন্য কৃষক পর্যায়ে স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ সরবরাহ করা ‘অত্যাবশ্যক’। ডাল, তেলবীজ, মসলা ও ভুট্টার মত যেসব ফসলে বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর, সেসব ফসল চাষে আগে থেকেই কৃষক পর্যায়ে ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে কৃষি ঋণ দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

এর পাশাপাশি এখন ধান, গমসহ সব দানা শস্য, অর্থকরী ফসল, শাক-সবজি ও কন্দাল ফসল চাষের জন্যও কৃষকের কাছ থেকে ৪ শতাংশ সুদ আদায় করা যাবে। বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ শতাংশ হারে সুদ ব্যাংকগুলোকে দেবে।

এই সুদহার চলমান এবং নতুন ঋণগ্রহীতা- উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। তবে ২০২১ সালের ৩০ জুনের পর চলমান ঋণের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য স্বাভাবিক হারে (৯ শতাংশ) সুদ আদায় করা যাবে কৃষকের কাছ থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও আগামী দিনে খাদ্যের উৎপাদন ও খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কৃষি খাতের সুদ হার কমানো হয়েছে।”

এর আগে গত ১৩ এপ্রিল শস্য ও ফসল খাতের বাইরে মৌসুম ভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রানিসম্পদ খাতে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

যার নাম দেয়া হয় “কৃষি খাতে বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কিম। এর মানে করনার কারণে কৃষি খাতের ক্ষতি মোকাবেলায় মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষকদের ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করলো বাংলাদেশ ব্যাংক।

শস্য ও ফসল খাতে নতুন স্কিম প্রণয়ন নিয়ে সার্কুলারে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে আগামীতে খাদ্যের উৎপাদন ও খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে কৃষি খাতে শস্য ও ফসল চাষের জন্য কৃষক পর্যায়ে স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ সরবরাহ করা অত্যাবশ্যক। আমদানি বিকল্প ফসল ডাল, তেলবীজ, মসলা জাতীয় ফসল ও ভুট্টা চাষ করার জন্য কৃষক পর্যায়ে ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদ হারে কৃষি ঋণ বিতরণের জন্য তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনা রয়েছে।

এখন আমদানি বিকল্প ফসলসমূহের পাশাপাশি কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে উল্লিখিত ধান, গমসহ সব দানা শস্য, অর্থকরী ফসল, শাক-সবজি ও কন্দাল ফসল চাষের জন্যও সুদ-ক্ষতি সুবিধার আওতায় কৃষক পর্যায়ে প্রণোদনা হিসেবে ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদ হারে কৃষি ঋণ বিতরণের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকৃত সুদ-ক্ষতি বাবদ ৫ শতাংশ হারে সুদ-ক্ষতি প্রদান করবে।

এতে আরো বলা হয়েছে, এ স্কিমের মেয়াদ হবে ১ এপ্রিল ২০২০ হতে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত। কৃষক পর্যায়ে সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ। উক্ত সুদ হার চলমান এবং নতুন ঋণগ্রহিতা উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। তবে ২০২১ সালের ৩০ জুনের পর চলমান ঋণের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য স্বাভাবিক সুদ হার প্রযোজ্য হবে।

কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো আগের বছরের ন্যয় নিজস্ব উৎস হতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত তাদের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কৃষক পর্যায়ে এ-ই ঋণ বিতরণ করবে।