Home ব্রেকিং ছোট্ট মেয়েটির হঠাৎ চলে যাওয়া নিয়ে রহস্য!

ছোট্ট মেয়েটির হঠাৎ চলে যাওয়া নিয়ে রহস্য!


বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেস্ক :  বরিশালের আগৈলঝাড়ার তৃতীয় শ্রেণির শিশু শিক্ষার্থী নুশরাত জাহান নোহার মৃত্যুর ঘটনা যতই দিন যাচ্ছে ততই রহস্যজনক হয়ে উঠছে।ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েটির এভাবে হঠাৎ চলে যাওয়া, কেউ মেনে নিতে পারছেন না। এরইমধ্যে তার আপন মা অভিযোগ করেছেন, বাবা ও সৎ মা মিলে তার মেয়েকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি তার মেয়ের হত্যার বিচার দাবি করেছেন।

এদিকে, এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে আপস মীমাংসা করতে মরিয়া হয়েছে উঠেছে একটি মহল। অপরদিকে, ঘটনার তিন দিনেও অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। শিশু নোহার বাবার সঙ্গে দেখা করেছেন বরিশালের এসপি মো. সাইফুল ইসলাম। অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকরি থেকে শনিবার অব্যাহতি দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন বলেন, শনিবার বিকেলে পরিচালনা কমিটির জরুরি সভা ডেকে মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষক সুমন পাইককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, শিশু শিক্ষার্থী নোহা পরিবারের সদস্যদের দ্বারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন নোহার নামে তার দাদা জমি লিখে দিতে চেয়েছিলেন। সম্পত্তি হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় পরিবারের সদস্যরা তাকে হত্যা করতে পারে। তিনি নোহা হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। এ সময় তিনি অভিযুক্ত শিক্ষকের এলাকা সাতলা ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের কাছে এসেছিলেন বলেও জানান।

নোহার আপন মা তানিয়া বেগম বলেন, নোহার বাবা সুমন মিয়া বর্তমানে চতুর্থ স্ত্রী নিয়ে সংসার করছেন। তিনিও বর্তমানে ঢাকায় সংসার করছেন। নোহা ওই পরিবারের সৎ মা ঝুমুর বেগমের কাছে ছিল চক্ষুশূল। তানিয়ার অভিযোগ তার মেয়ে নোহাকে তার সৎ মা ঝুমুর বেগম ও স্বামী সুমন মিয়া হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে।

নোহার মৃত্যুর খবর পেয়ে বুধবার রাতেই তানিয়া বেগম ঢাকা থেকে এলাকায় ছুটে আসেন। ওই দিন ও শনিবার বিকেলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে তার মেয়ে নোহাকে স্বামী ও সতিন পরস্পর যোগসাজশে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে অপপ্রচার করায় তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করেন তিনি।

তানিয়া বেগম তার অভিযোগের ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আদালতের মাধ্যমে নোহাকে তার বাবার জিম্মায় দেয়া হয়। নোহার মৃত্যুর দুই দিন আগে তার দাদা তাকে (তানিয়াকে) ফোনে জানিয়েছিলেন যে, তার নাতির জন্য তিনি সম্পত্তি লিখে দেবেন, যাতে ভবিষ্যতে নোহার কোনো কষ্ট না হয়। ওই সম্পত্তি লিখে দেয়ার কথাই নোহার মৃত্যুর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, শিক্ষকতো ঘটনার দিন শুধু নোহাকেই মারধর করেনি, অন্যদেরও মেরেছে। তবে নোহা কেন আত্মহত্যা করবে? তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন অতটুকু মেয়ে কিভাবে ওড়না ও গামছা জোড়া লাগিয়ে গলায় ফাঁস দিতে পারে? সম্পত্তি বেহাত হবার আশঙ্কায় নোহার মৃত্যুর পেছনে সৎ মা ও তার সাবেক স্বামী জড়িত রয়েছেন।

বাগধা ইউপির খাজুরিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমি দীর্ঘদিন বন্ধের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর (শনিবার) স্কুলের মাসিক পরীক্ষা হয়। তিন দিন পরে ওই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয় বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে।

প্রকাশিত ফলাফলে নুশরাত জাহান নোহা ৩০ নম্বর পেয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় স্কুলের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন পাইক নোহাকে ক্লাস রুমে বেত্রাঘাত করে গালমন্দ করেন।

নুশরাত জাহান নোহা খাজুরিয়া গ্রামের মো. সুমন মিয়ার মেয়ে ও অভিযুক্ত শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন পাইক পার্শ্ববর্তী উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের মো. আব্দুল লতিফ পাইকের ছেলে।

এদিকে মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন পাইককে বাঁচাতে সাতলা ইউপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন পাইক তার লোকজন নিয়ে নোহার বাবাসহ বাড়ির লোকজনের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি আপস মীমাংসার প্রস্তাব দেন।

সাতলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন পাইক মোবাইল ফোনে আপন মীমাংসার কথা অস্বীকার করে বলেন, তারা নোহার শোকার্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলেন।

আগৈলঝাড়া থানার ওসি মো. আফজাল হোসেন জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আসামি গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।