Home অন্যান্য উড়াল দেবে বাইশে

উড়াল দেবে বাইশে


ষ্টাফ রিপোর্টার: উড়ালের পথে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। এটি চলবেও উড়ালপথে। সব ঠিক থাকলে বাইশে অর্থাৎ ২০২২ সালে উড়াল দিতে শুরু করবে মেট্রোরেল। জানা গেছে, ২০২১ সালের শুরুতেই শুরু হবে এর ট্রায়াল রান। রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল-কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রুট পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৪০ মিনিট। ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহন করতে পারবে মেট্রোরেল।
বর্তমানে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের কাজ চলছে পুরোদমে। দিয়াবাড়ী ডিপো থেকে তিনটি স্টেশন প্রস্তুত হয়ে গেছে। এখন চলছে স্টেশন তিনটির বৈদ্যুতিক সংযোগ ও অন্যান্য কারিগরি কাজ।
মেট্রোরেলের পথের দৈর্ঘ্য মতিঝিল পর্যন্ত ছিল ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। কিন্তু এখন তা মতিঝিল পেরিয়ে কমলাপুর পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বেড়ে যাচ্ছে। ফলে স্টেশনও একটি বেড়ে ১৭টি হচ্ছে। মতিঝিল-কমলাপুর বাড়তি রুটের অ্যালাইনমেন্ট করার আগে চলছে সোশ্যাল সার্ভে। এটি শেষ হবে এ মাসেই। মেট্রোরেল চালুর জন্য এখনো ভাড়া নির্ধারণ করা যায়নি।
ভাড়া দিয়ে লাভজনক করা যাবে না- এমন বিবেচনায় ট্রানজিট
ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট হাব ও স্টেশন প্লাজা
গড়ে তোলা হবে। জাপানের কারখানায় প্রথম চালানের পাঁচটি কোচ নির্মাণের কাজ চলছে, যা এ মাসেই শেষ করার কথা। নতুন বছরের শুরুতে এই পাঁচ সেট ট্রেন দিয়ে ট্রায়াল রান শুরু করা হবে। প্রতিটি ট্রেনের ছয়টি কোচের মধ্যে একটি কোচ নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তবে ট্রেনের অন্যান্য কোচে নারী-পুরুষ একসঙ্গে ভ্রমণ করতে পারবেন।
ইতোমধ্যে মোট নয়টি স্টেশনের সাব-স্ট্রাকচার সম্পন্ন হয়ে গেছে। উত্তরা উত্তর, উত্তরা মধ্য ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের হলঘরের ছাদ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া স্টেশনের হলঘরের নির্মাণকাজ চলছে। উত্তরা মধ্য ও উত্তরা দক্ষিণের প্ল্যাটফরমের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে আর উত্তরা-উত্তরের প্ল্যাটফরম নির্মাণের কাজ শেষ দিকে। বর্তমানে কর্মব্যস্ততা মেট্রোলাইনের ডিপো এলাকায়। ডিপোর ভেতরে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল আকারের দুটি ছাউনি। একটি ছাউনির নিচে রয়েছে মেরামত কারখানা। অন্য ছাউনির নিচে থাকবে ট্রেন। দুটি ছাউনির ভেতর প্রয়োজনীয় যন্ত্র-অবকাঠামো বসানোর কাজ চলছে।
পল্লবী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ছয়টি স্টেশন তৈরির কাজ চলছে। এর মধ্যে আগারগাঁওয়ের উড়ালপথ তৈরির কাজ প্রায় শেষ। প্রতিদিন ভোর ৫টায় ডিপো এলাকা থেকে চলাচল শুরু করবে মেট্রোরেল। মধ্যরাতের বিরতিতে হবে ধোয়ামোছা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে ওয়ার্কশপ, স্ট্যাবলিং শিল্ড। বসে গেছে ডিপো এলাকার ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রেললাইন। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১১ দশমিক শূন্য ৪ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে। মেট্রোরেলের ৮ দশমিক ১২ কিলোমিটার পড়েছে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। এই পথে খুঁটি নির্মিত হয়েছে। কিন্তু উড়ালপথ তৈরি হয়নি। এই অংশে সাতটি স্টেশনের কাজও শুরু হয়নি।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও প্রথম অংশের কাজের অগ্রগতি ৭৭ শতাংশের বেশি। সফটওয়্যার, সিস্টেমসহ ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল অংশ নিয়ে প্যাকেজের কাজও শেষ হয়ে গেছে অর্ধেক।
প্রকল্পটির তথ্যমতে, এমআরটি-৬ মেট্রোরেল প্রকল্পের ১নং প্যাকেজের (সিপি-০১) আওতায় রয়েছে উত্তরায় ডিপোর ভূমি উন্নয়ন। ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর এ প্যাকেজের চুক্তি সই হয়। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এ প্যাকেজের কাজ সম্পন্ন হয়। আর ২নং প্যাকেজের (সিপি-০২) আওতায় ডিপোর পূর্তকাজ চলছে। প্রকল্পটির ৩ ও ৪নং (সিপি-০৩ ও ০৪) প্যাকেজের আওতায় উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ) ও নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। মেট্রোরেলের ৫নং প্যাকেজের (সিপি-০৫) আওতায় আগারগাঁও থেকে কারওয়ানবাজার পর্যন্ত প্রায় ৩ দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট এবং বিজয় সরণি, ফার্মগেট ও কারওয়ানবাজার এলাকায় তিনটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। মেট্রোরেলের ৬নং প্যাকেজের (সিপি-০৬) আওতায় কারওয়ানবাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ৪ দশমিক ৯২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব ও মতিঝিলে চারটি মেট্রো স্টেশনও নির্মাণ করা হবে। এখন মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অংশ বর্ধিত করা হচ্ছে। এ জন্য নতুন করে কাজ শুরু করতে হবে। চালাতে হবে সমীক্ষার কাজও। আর ৭নং প্যাকেজের আওতায় মেট্রোরেলের স্টেশনগুলো ওঠানামার জন্য চলন্ত সিঁড়ি ও লিফট, প্রায় ২০ কিলোমিটার রেলওয়ে ট্র্যাক, স্বয়ংক্রিয় ভাড়া আদায় ব্যবস্থাপনা, ১৩২ কেভি বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন ও ট্রেনে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, টেলিকমিউনেশন সিস্টেম, প্ল্যাটফরম স্ক্রিন ডোর ইত্যাদি স্থাপন করা হবে। সর্বশেষ ৮নং প্যাকেজের (সিপি-০৮) আওতায় মেট্রোরেলের জন্য রোলিং স্টক (ইঞ্জিন-কোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৪ সেট ট্রেন এবং ডিপো ইকুইপমেন্ট ছাড়াও ট্রেন সিমুলেটর, খুচরা যন্ত্রাংশ ও সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এ প্রকল্পের সংশোধিত অ্যালাইনমেন্ট হচ্ছে- উত্তরা তৃতীয় পর্ব-পল্লবী-রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে খামারবাড়ী হয়ে ফার্মগেট-হোটেল সোনারগাঁও-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর-তোপখানা রোড-বাংলাদেশ ব্যাংক-জসিম উদ্দিন রোডের প্রথম অংশ হয়ে দক্ষিণ দিক দিয়ে সার্কুলার রোডসংলগ্ন কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা। নতুন স্টেশন কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করতে অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন। চলমান সোশ্যাল সার্ভে শেষ হওয়ার পর একই সঙ্গে ভূমি অধিগ্রহণ ও ডিজাইনের কাজ শুরু হবে। এ মেট্রোরেল নির্মাণে চার দেশের পাঁচটি কোম্পানির কনসোর্টিয়াম এনকেডিএম অ্যাসোসিয়েশন পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে। নতুন প্যাকেজ অন্তর্ভুক্ত হওয়া, কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল বর্ধিত করা ইত্যাদি কারণে পরামর্শকের কাজের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাটি থেকে প্রায় ১৩ মিটার ওপরে উড়াল সড়ক। মূল সড়ক থেকে প্রায় ১৩ মিটার উঁচু এ পথে বসছে রেললাইন। দোতলায় ১৮০ মিটার লম্বা, ৩৩ মিটার চওড়া কনকর্স হলরুম। যাত্রীরা সিঁড়ি, এস্কেলেটর ও লিফটে চড়ে কনকোর্স হল থেকে টিকিট কাটবেন। এর একতলা ওপরে ট্রেনে চড়ার প্ল্যাটফরম।
মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। তবে বাস্তবায়ন বিলম্বে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এমআরটি-৬ উদ্বোধনের জন্য ২০২১ সালের ডিসেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তার আগে ফার্মগেট পর্যন্ত চালুর কথা ছিল। পরে একসঙ্গে উত্তরা থেকে মতিঝিল পুরোপুরি চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বর্ধিত করা হবে। এ জন্য ১৬টি স্টেশনের পরিবর্তে ১৭টি স্টেশন করা হবে। ২০২২ সালের মধ্যে মেট্রোরেল চলবে এমন আশা প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের।