Home ঢাকা ক্যাম্পাস “শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংরক্ষণ জরুরি”

“শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংরক্ষণ জরুরি”


গত বছর ২০২০ ইং সালের ১৭ মার্চ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। করোনালে বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কমবেশি বন্ধ ছিল বা আছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটানা দেড় বছরের মতো বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ বিশ্বে আর কোথাও পাওয়া যাবে না। ইউনেস্কোর তথ্যানুসারে করোনায় সব চাইতে আক্রান্ত দেশেও একটানা দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার উদাহরণ নাই। ঐ সব দেশে বিবিধ প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ রাখার উদাহরণ থাকলেও যখনই সুযোগ সুবিধা হয়েছে তখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আবার বন্ধ করেও দেওয়া হয়েছে। পুনঃপুনঃ ভাবে এই পদ্ধতির অনুসরণ চলছে সেসব দেশে। অথচ আমাদের দেশে কেন দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হচ্ছে, তার কোন যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিবেশী দেশ ভারত, যাদের সাথে আমাদের কৃষ্টি-কালাচারের মিল পাওয়া যায় অনেক ক্ষেত্রেই সেখানেও একটানা বন্ধ করে রাখা নাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। যদিও সেখানকার করোনা পরিস্থিতি মাঝে মধ্যে ভয়ংকর হয়ে উঠে।

ইউনেস্কো বিভিন্ন দেশের করোনাকালিন বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪টি ক্যাটাগরি করেছে। এক–পড়াশোনা একেবারে বন্ধ, দুই–আংশিক পড়াশোনা , তিন–স্কুল পুরোপুরি বন্ধ, চার–স্কুল পুরোপুরি খোলা। আমাদের আরেকটা প্রতিবেশী দেশ মায়ানমার, করোনার পাশাপাশি ওখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই নাজুক। এমন পরিস্থিতিতেও সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আংশিক খোলা আছে। যেমনটা আছে ভারতেও। এমনকি সুদীর্ঘ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত আফগানিস্তানেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আংশিক খোলা। বিশ্বের সব দেশই তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেকোন সুরতে খোলা রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমাদের এখানে টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে শিশু কিশোরদের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল শুরুর দিকে। পাশাপাশি অনলাইনেও শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু টেকনিক্যাল সুবিধার অপ্রতুলতার কারণে কোন প্রচেষ্টাই সেভাবে সাফল্যের মুখ দেখাতে পারে নাই। ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা সাধারণত আর্থিক ভাবে সচ্ছল থাকে। তারা সহজে টেকনিক্যাল সুবিধাদি সংগ্রহ করতে সক্ষম। এর ফলে প্রযুক্তির পূর্ণ সদব্যবহার করে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে পুরোপুরি শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, দেশের ১৪৫টি ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ২৭ হাজার শিক্ষার্থী করোনাকেলেও তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শতভাগ চালু রাখতে সক্ষম রয়েছে।

সম্প্রতি একটি প্রঞ্জাপন জারির মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পরেও যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে, এমন কোন লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না। কারণ টিকা প্রাপ্তি এবং করোনা সংক্রমণ কমার হারের যে বাধ্যবাদকতা সংযুক্ত করা হয়েছে চলতি বছরে তা পূরণ হবার কোন সম্ভাবনা নাই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়সমুহ খুলে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা নিকট অতিত অবিজ্ঞতা থেকে এ ঘোষণায় আস্থা রাখতে পারছে না। কারণ তারা দেখছে একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের অন্য সব প্রতিষ্ঠান কমবেশি সব সময় খোলা ছিল এবং আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত জনগোষ্ঠী শিক্ষা কার্যক্রম ছাড়া তাদের দৈনন্দিন অন্যান্য কাজকর্ম স্বাভাবিক ভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে। তাহলে কেন শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম চালাতে পারবেন না ? এই প্রশ্নের উত্তর তারা কোন মহল থেকেই পাচ্ছেন না। যখন সব কিছুই চালু তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন বন্ধ থাকবে ? বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার ব্যাপারে একটা সময় সীমা নির্ধারণ করা হলেও অন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে নিরব। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থা অদৃশ্য কোন রাহুরদশায় পড়েছে, করোনা একটি উসিলা মাত্র।

ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনার মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার তালিকায় বাংলাদেশ দ্বিতীয়। এর ফলে দেশের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী একটানা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে। তাদের মধ্যে এক ধরনের মানসিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অদূরভবিষ্যতে এর মাসুল জাতিকে বেশ খারাপ ভাবে দিতে হবে বলে মনে করছেন গবেষকবৃন্দ। একটি বিষয় আলোচনার দাবি রাখে, দেশে পাবলিক প্রাইভেট মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় দেড় শত। উচ্চ শিক্ষার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছে শুধু মাত্র প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। করোনা শুরুর প্রথম দিন থেকেই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করে নূন্যতম পর্যায়ে হলেও অনলাইনে সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নির্বিকার। ওখানকার কর্তাব্যক্তিরা খাচ্ছেন দাচ্ছেন ঘুমাচ্ছেন। আর মাস শেষে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন। তাঁদের একটা গা-ছাড়া ভাব, আত্মসমালোচনা বলতে কিছুই নাই। এদিকে উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দুটি জেনারেশন যে ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে এ ব্যাপারে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নাই।

শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস আঙ্গিনায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিক উদ্যোগ জরুরি। স্বাস্থবিধির উপর কড়াকড়ি ভাবে জোর দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার এখনই সময়।