Home ব্রেকিং সরব তিতাস আতঙ্কে অবৈধ সংযোগকারীরা

সরব তিতাস আতঙ্কে অবৈধ সংযোগকারীরা


অবৈধ সংযোগ মুক্ত করতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে তিতাস কর্তৃপক্ষ। তিতাস আওতাধীন এলাকায় গত কয়েক মাসের টানা অভিযানে দিশাহারা হয়ে পড়েছে অবৈধ সংযোগকারীরা। অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণায় আতঙ্কের মধ্য রয়েছেন অবৈধ সংযোগে জড়িতরা।

অনেকেই গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। সাভারের ইমান্দিপুরে ফিল অ্যাগ্রো ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি পানীয় কোম্পানির ব্যবসা চলছিল কয়েক বছর ধরেই। জমির মালিকের বাসার সংযোগ থেকে কারখানার ফ্লোরের টাইলসের ভেতর দিয়ে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক গ্যাস ব্যবহার করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি সাভারে ইমান্দিপুর ও দক্ষিণ হেমায়েতপুর এলাকায় অভিযানকালে কারখানার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিতাস। শুধু ওই কারখানা নয়, ওই দিন এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত প্রায় ৫০০ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিতাস কর্তৃপক্ষ।

সাভার আঞ্চলিক তিতাস গ্যাস অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এই উপজেলায় বৈধ আবাসিক গ্যাস গ্রাহকের সংখ্যা ৫০ হাজার। তবে অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহারকারীর সংখ্যা এর কয়েকগুণ। এ পর্যন্ত ১২৫টি অভিযানে সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের কাশিমপুরে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে প্রায় এক লাখ ৬৭ হাজার ৬৬৮টি অবৈধ সংযোগ। শুধু সাভার, গাজীরপুর নয়, গ্যাসের অবৈধ সংযোগের সরাসরি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশজুড়ে অহরহ।

তিতাস প্রধান কার্যালয় সূত্র মতে, মন্ত্রণালয়ের কড়া নির্দেশনায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিডের (তিতাস) আওতাধীন এলাকায় গত কয়েক মাস ধরে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এরমধ্যে গত নভেম্বর থেকে চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত সাড়ে তিন মাসে তিতাস কর্তৃপক্ষ প্রায় ১০০ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস বিতরণ লাইন অপসারণ করেছে। গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী তিতাসের টিম ৯৪টি অভিযান পরিচালনা করেছে। যার মধ্যে প্রায় ৩২১টি স্পট বা এলাকা রয়েছে।

এসব এলাকায় প্রায় শত কিলোমিটার অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। যার মধ্যে ৬২ হাজার ৪২৩টি বার্নার বা চুলা, ৫৭টি শিল্প সংযোগ ও ৫৭টি বাণিজ্য সংযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ৪৪টি মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের ৪৭ লাখ ৭৩ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে ১৫টি ক্যাপটিভ গ্যাস সংযোগ।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে গত জানুয়ারি মাসে রাজধানীর ১০৩টি স্পটে ২৮ অভিযান পরিচালনা করেছে তিতাস। এসব মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিভিন্ন এলাকায় আনুমানিক ২৫ কি.মি. অবৈধ বিতরণ লাইন উচ্ছেদ করা হয়েছে, এতে আনুমানিক ১১ হাজার ৪৯৭টি চুলা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বকেয়া ও অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের কারণে ২১টি শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর ডেমরায় শিল্প কারখানা ও আবাসিক বাড়ির অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন করতে অভিযান পরিচালিত হয়। ডগাইর কালু মিয়া রোড ও সারুলিয়া রেবেকা সরণি ও দারুন্নাজাত মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় পর্যায়ক্রমে এ অভিযান পরিচালিত হয়।

এসময় ডেমরা থানা পুলিশের উপস্থিতিতে ডগাইর এলাকায় ৭৫ সিএফটি ক্ষমতাসম্পন্ন ১৪টি স্টার বার্নারসহ মায়ের দোয়া ফুড প্রোডাক্টস নামে একটি নুডুলস কারখানা অবৈধ বাণিজ্যিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। যার অনুমোদন ছিল একটি ডাবল চুলার যা ২১ সিএফটি ক্ষমতায় গ্যাস ব্যবহার করা যাবে। ওই ঘটনায় ওই গ্যাস সংযোগের মালিক মো. নুরুল আমিন ভূঁইয়াকে বৈধ আবাসিক সংযোগ থেকে বাবুল শেখকে (বাবু) অবৈধ বাণিজ্যিক গ্যাস সংযোগ দেয়ার দায়ে এক লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এদিন সারুলিয়া রানীমহল এলাকা ও দারুন্নাজাত মাদ্রাসা এলাকায় চারটি আবাসিক বাড়ির ৩০টি ডাবল চুলার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ ১৫০ ফুট তিন-চার ইঞ্চি পাইপ জব্দ করা হয়। মিরপুর-১২ নম্বরের সুজাতনগরে বহুতল এক ভবনের পুরোটাই তৈরি পোশাক কারখানা। কারখানাটি চলছিল অবৈধ গ্যাসলাইন সংযোগের মাধ্যমে এবং প্রতিদিন অন্তত পাঁচ হাজার টাকার গ্যাস ব্যবহার করছিল। একই দিন তিতাসের অভিযানে একটি গার্মেন্টস ও বহুতল আবাসিক ভবনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। একই সাথে আর্থিক জরিমানা ও মামলা হয়েছে মালিকদের বিরুদ্ধে।

সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর হাজারীবাগে তিতাসের অভিযানে এবার বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে আড়াই হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ। বিভিন্ন হোটেল ও আবাসিক ভবনের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি খুলে নেয়া হয় মিটারও।

তিতাস সূত্র জানায়, হাজারীবাগে তৃতীয় বারের মতো অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযানে গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস। মাটির নিচ দিয়ে টানা হয়েছে অবৈধ লাইন। ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে হাজারীবাগের বিভিন্ন ভবনে। এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে তিতাস। পাশাপাশি যেসব আবাসিক বাড়িতে নির্ধারিত চুলার অতিরিক্ত সংযোগ রয়েছে সেসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

হাজারীবাগের স্থানীয় বাসিন্দা মোদাচ্ছের আলী আমার সংবাদকে বলেন, অভিযানের পর পুরো এলাকায় অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারীরা আতঙ্কে রয়েছেন। অনেক বাড়িওয়ালা বাসায় থাকছেন না, নানাভাবে লাইন রক্ষার চেষ্টা করছেন। ১ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর এলাকা থেকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি।

তিতাস গ্যাস সোনারগাঁওয়ের আঞ্চলিক বিপণন বিভাগ সূত্র মতে, বন্দর উপজেলায় ১২টি অবৈধ গ্যাস সংযোগের স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ১২টি স্পটে ১৭ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাসের সংযোগ নিয়ে প্রায় ৩০ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। এসব সংযোগ বিচ্ছিন্নে অভিযান শুরু হয়েছে।

গত ১৯ জানুয়ারি তিতাসের কয়েকটি টিমের একদিনের অভিযানেই গাজীপুরে প্রায় এক হাজার অবৈধ আবাসিক ও প্রায় দুই কিলোমিটার গ্যাস লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানকালে আদালত অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ ও ব্যবহারের দায়ে স্থানীয় দু’জনকে মোট ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করেন।

এসময় প্রায় ৫০০ বাসা-বাড়ির প্রায় এক হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং অবৈধভাবে স্থাপিত প্রায় দুই কিলোমিটার পাইপলাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও অপসারণ করা হয়। অভিযানকালে চুলাসহ বিভিন্ন ব্যাসার্ধের পাইপ, রাইজার ও অবৈধ সংযোগে ব্যবহূত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।

তিতাসের পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, ‘যতদিন অবৈধ সংযোগ থাকবে, ততদিন অভিযান চলবে। অভিযান জোরারো হচ্ছে এবং বকেয়া অর্থ উদ্ধারের কাজও চলছে। যাদেরকে ধরতে পারছি, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সিন্ডিকেটে তিতাসের কেউ থাকলেও রেহাই নেই। ইতোমধ্যে আমার সময়ে চারজনকে শাস্তির আওতায় এনেছি।’

প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, ‘দেখেন যারা অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করে রান্না করছে, তারা এক হাজার টাকার জন্য হালাল টাকায় উপার্জিত বাজার-ঘাট পুরো পরিবার নিয়ে অবৈধ খাবার খাচ্ছে, অর্থাৎ পুরো বাজার করা পণ্যও অবৈধ। বিবেক দিয়ে দেখ অনুভব করলে এ কাজটি কেউ করত না।’