Home আইন/আদালত এফবিসিসিআই হতে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ২৬ কর্মকর্তা কর্মচারীকে চাকুরিতে পুনঃবহাল ও...

এফবিসিসিআই হতে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ২৬ কর্মকর্তা কর্মচারীকে চাকুরিতে পুনঃবহাল ও বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের জন্য তিন মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য সচিব, মহাপরিচালক ও এফবিসিসিআই সভাপতির প্রতি হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত””


দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই হতে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ২৬ কর্মকর্তা কর্মচারীকে চাকুরিতে পুনঃবহাল ও তাদের বকেয়া বেতনভাতাদিসহ সমুদয় পাওনা পরিশোধের জন্য আদেশ প্রাপ্তির তিন মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, বাণিজ্য সংগঠনসমূহের মহাপরিচালক ও এফবিসিসিআই সভাপতির প্রতি হাইকোর্ট কর্তৃক ২৮ আগষ্ট তারিখে প্রদত্ত আদেশ স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম।

মঙ্গলবার ০৬ সেপ্টেম্বর মাননীয় চেম্বার জজ আদালত এফবিসিসিআই কর্তৃক দায়েরকৃত সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিলের (নং-২৪৭৫/২০২২) উপর শুনানি শেষে আগামী ০৭ নভেম্বর ২০২২ তারিখে মাননীয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিমকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানীর তারিখ নির্ধারণ করে আদেশ প্রদান করেন। এফবিসিসিআই- এর পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এটর্নী জেনারেল সিনিয়র এডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন। অপরদিকে এফবিসিসিআই-এর সাবেক ২৬ কর্মকর্তা কর্মচারীর পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী এডভোকেট বি এম ইলিয়াস কচি। আরো উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট-অন-রেকর্ড মোহাম্মদ আব্দুল হাই।
উল্লেখ্য, গত ২৮ আগষ্ট বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মোঃ আখতারুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের এক ডিভিশন বেঞ্চ এফবিসিসিআই এর সাবেক কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব-সদস্যপদ ও আইনবিষয়ক) মোঃ রফিকুল ইসলাম ও অন্যান্য ২৫ কর্মকর্তা কর্মচারীর দায়ের করা এক রিট পিটিশনের শুনানি শেষে তাদের চাকুরীতে পুনঃবহাল ও এফবিসিসিআই-এর ১৯৯০ সালের সার্ভিস রুলস্ অনুযায়ী বেতন-ভাতাদি পরিশোধের জন্য বিবাদীদের নিকট ২১/০৮/২০২২ইং তারিখে দাখিলকৃত আবেদন আদেশ প্রাপ্তির তিন মাসের মধ্যে নিস্পত্তির নির্দেশনা দিয়ে চার সপ্তাহের রুল ইস্যু করেন। রিট পিটিশন নং-৯৩২৮/২০২২।

উল্লেখ্য, ভূক্তভোগী কর্মকর্তা কর্মচারীরা ২০২১ সালের ২০ জুন তারিখে প্রথম এবং সর্বশেষ ২১ আগষ্ট ২০২২ তারিখে বিবাদীদের নিকট প্রতিকার প্রার্থনা করে লিখিত আবেদন করেন। তবে তাদের আবেদনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও মহাপরিচালক, বাণিজ্য সংগঠনসমূহ (ডিজি) এবং এফবিসিসিআই সভাপতি কোন কর্ণপাত করেননি। তাদের চাকুরিতে পুনঃবহাল এবং প্রাপ্য বেতনভাতাদি পরিশোধের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

দাখিলকৃত আবেদন হতে জানা যায় যে, চাকরিতে পুনর্বহাল ও বকেয়া পাওনাদির দাবিতে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিকে (এফবিসিসিআই) উকিল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন সংগঠনটির সাবেক ২৬ জন কর্মকর্তা কর্মচারী। ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী ইমাম হাছান এবং ০৬ মার্চ ২০২২ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী ব্যারিষ্টার এস. এম আতিকুর রহমানের মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও বাণিজ্য সংগঠনসমূহের মহাপরিচালক এবং এফবিসিসিআই-এর সভাপতি ও মহাসচিব বরাবর লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছিলো। ২০২০ সালের ২০ অক্টোবরে এফবিসিসিআই থেকে ৬২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একসঙ্গে পদত্যাগ করানো হয়। তাদের দাবি তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের চাপে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। নোটিশে আইনজীবীরা বলেছেন, তাদের মক্কেলরা এতদিনেও জানেন না যে, তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে কিনা। এ বিষয়ে কোনো চিঠি ইস্যু হয়নি। ফলে এই পদত্যাগপত্র অবৈধ, বে-আইনি ও অকার্যকর। নোটিশ পাওয়ার দশ দিনের মধ্যে এসব কর্মীকে নিজ নিজ পদে পুর্নবহাল এবং চাকরিতে যোগদানের জন্য লিখিতভাবে জানানো ও বকেয়াসহ নিয়মিত বেতনভাতাদি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন আইনজীবীরা। আরো জানা যায় যে,

তৎকালীন এফবিসিসিআই সভাপতি করোনা মহামারির দোহাই দিয়ে এফবিসিসিআই- এর ৬২ কর্মকর্তা কর্মচারীকে একই দিনে গণপদত্যাগে বাধ্য করেন। তন্মধ্যে কয়েকজনকে প্রাপ্ত বেতনভাতাদির মাত্র ২০ ভাগ পরিশোধ করা হয় এবং অনেককে প্রভিডেন্ট ফান্ডের নামমাত্র অর্থ ছাড়া সার্ভিস বেনিফিটের কোন অর্থই প্রদান করা হয়নি। কর্তৃপক্ষের করোনাকালীন দু:সহ পরিস্থিতিতে চরম অবহেলা, চাকুরিচ্যুতি ও বেতনভাতাদি না পাওয়ায় মানসিক যন্ত্রণায় শেষ পর্যন্ত কর্মকর্তা এ এফ আইনুল হুদা ও কর্মচারী আব্দুল বারেক হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন। রিটের আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন- এফবিসিসিআই-এর কর্মকর্তাদের মধ্যে- সর্বজনাব মোঃ রফিকুল ইসলাম, মোঃ সাইফুল ইসলাম, মোঃ হারুন আর রশিদ, শাহ মোঃ মাকসুদুল হক, মোঃ তাহেরুল ইসলাম রুবেল, মোঃ হুমায়ন কবির, সাবিনা ইয়াছমিন, মোঃ মনিরুজ্জামান, জাকির হোসেন সরকার, চৌধুরী কামরুল হাসান, লিপিকা রাণী হালদার, মোঃ রফিকুল ইসলাম এবং স্টাফদের মধ্যে- রিটা রায় (টেলিফোন অপারেটর), মোঃ আব্দুল জব্বার (সিনিয়র সহকারী), মোঃ রফিকুল ইসলাম (কম্পিউটার অপারেটর), বেনজিন আরা বেগম (সিনিয়র সহকারী). তানিয়া ভূইয়া (সিনিয়র সহকারী), ওমর আলী (সিনিয়র সহকারী), আবদুল আওয়াল (জুনিয়র সহকারী), মাহবুব হোসেন (মেসেঞ্জার), স্বপন উর রহমান (লিফটম্যান), মিজানুর রহমান (ড্রাইভার), আলী আকবর (ড্রাইভার), ফজলুল হক (ড্রাইভার), কামরুজ্জামান খান (সিনিয়র সহকারী) এবং পেশ ইমাম হাফেজ ক্বারী মাওলানা মোস্তফা কামাল প্রমুখ।