Home জাতীয় ইসলাম নারীদের পর্দা ফরজ করা হয়েছে এবং পর্দা করা মানে নিজেকে আড়ালে...

ইসলাম নারীদের পর্দা ফরজ করা হয়েছে এবং পর্দা করা মানে নিজেকে আড়ালে রাখা


মোঃ রফিকুল ইসলাম : পর্দা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল কারিমের সুরা নুর: আয়াত-৩০: মু’মিনদেরকে বলঃ তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে; এটা তাদের জন্যে পবিত্রতম; তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ অবহিত।

সুরা নুর: আয়াত-৩১: ঈমান আনয়নকারী নারীদেরকে বলঃ তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে; তারা যেন তার মধ্যে যা সাধারণতঃ প্রকাশ থাকে তা ব্যতীত তাদের অলংকার বা সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তাদের ঘাড় ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় (ওড়না বা চাদর) দ্বারা আবৃত্ত করে. তারা যেন তাদের স্বামী, পুত্র, ভ্রাতা, ভাতুষ্পুত্র, ভগ্নীপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো নিকট তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে না হাটে, হে মু’মিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।
হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রাথমিক যুগের মহিলাদের প্রতি আল্লাহ ত’আলা রহম করুন। আল্লাহ তা’আলা এ আয়াতটি নাযিল করলে এবং তারা যেন নিজেদের বঙ্খদেশের উপর ওড়নার আবরণ ফেলে রাখে। তারা (মহিলারা) তাদের বস্ত্রগত ছিড়ে তা দিয়ে মুখমন্ডল ঢেকে ফেলল (বুখারী, হাদিস নং-৪৭৫৮) সাফিয়া বিনতে শাইবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আয়েশা (রাঃ) বলতেনঃ এ আয়াত নাযিল হলে. “এবং তারা” যেন নিজেদের বক্ষদেশের ওপর ওড়নার আবরন ফেলে রাখে।” মহিলারা তাদের কোমর বন্ধের কাপড়ের প্রাপ্তদেশ কেটে সেই টুকরা দিয়ে (ওড়না বানিয়ে) মুখমন্ডল ঢেকে রাখে (বুখারী, হাদিস নং ৪৭৫৯)।

প্রতিটি ধর্মের নর-নারীদের জন্য পর্দা করার বিধান রয়েছে। তবে অন্যান্য ধর্মের থেকে ইসলাম ধর্মে পর্দার পার্থক্য হলো – ইসলাম পর্দা বাধ্যতামূলক, তাই মুসলিম নারীরা খুব ভালোভাবে পর্দা করে এবং অন্যান্য ধর্মের সম্মানিত নারীরা (সীমিত) পর্দা করে। অন্যান্য ধর্মের নারীরা (সীমিত) পর্দা করে। মুসলিম নারীরা পরিপূর্ণ পর্দা করে।

এখানে আমাদের কিছু বিষয়ের উপর বোঝার প্রয়োজন আছে। যেমন আমরা সাধারণত পর্দা বলতে বুঝি বোরখা পড়া। আসলে তা নয় পর্দা সম্পর্কে বোঝার অনেক পার্থক্য রয়েছে যেমন:-“পুরুষদের পর্দা নিজের দৃষ্টি সংযত রাখা। নারীর পর্দা নিজের দেহ (সৌন্দর্য) আড়াল করা” মুসলিমদের পবিত্র গ্রন্থ আল-কোরআনুল কারিমের সুরা নুর আয়াত নং ৩০ ও ৩১ নারী পুরুষ উভয়ের পর্দার ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়াও কোরআনে প্রথমে পুরুষদের পর্দার কথা বলা হয়েছে। তারপর নারীর পর্দার কথা বলা হয়েছে। পর্দা জিনিসটা শুধুমাত্র নারীর জন্য নয়। পর্দা হলো নারী পুরুষ উভয়ের জন্য।

অপ্রিয় হলেও সত্য কিছু খারাপ প্রকৃতির নারী বোরখা পরে খারাপ কাজ করে এর অর্থ এই নয় যে, তারা পর্দা করে। তারা শুধু নিজেদেরকে ঢেকে রেখে তাদের খারাপী কাজগুলো করে যাচ্ছে। যাতে পুলিশ বা অন্যান্য মানুষ তাদেরকে না চিনে।

দেহ-ব্যবসায়ী ও মাদক-ব্যবসায়ী নারীরা বোরখা পরে শহরে ঘোরাফেরা করে কেন? কারণ, এভাবে আত্মগোপন করা সহজ হয়। বোরখা পরে ছদ্মবেশে তাদের কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে পারে। তাদের কি পর্দা হয়? না, হয় না।

পক্ষান্তরে এবং একজন দ্বীনি মাদ্রাসার ছাত্রী বোরখা পরলে পর্দা হয়। কিন্তু, দেহ-ব্যবসায়ী বোরখা পরলে পর্দা পরলে কি তার পর্দা হবে? কারণ এখানে উদ্দেশ্য ও চেষ্টাই হলো পর্দা।

পর্দার কয়েকটি উদাহরণঃ
বাজারে গিয়ে অমুক জিনিস কিনতে হবে। তাতে অনেক অচেনা পুরুষের সাথে দেখা হবার সম্ভাবনা আছে। এজন্যে মাদ্রাসার ছাত্রীটি নিজের ছোট ভাইকে বাজারে পাঠিয়ে দিয়েছে। এটাই তার পর্দা। এখানে সে বোরখা পরেনি।
ছাদে শোকানো কাপড় আনতে গিয়ে, দেখে ওখানে কয়েকটি ছেলে সিগারেট টানছে। মেয়েটি কোন আওয়াজ না করেই, ফিরে গেছে। এই ফিরে যাওয়াটা তার পর্দা। এখানে সে বোরখা পরেনি।
কাউন্টারে খুবই ভীড়। ওখানে গেলে অন্য কোন পুরুষের সাথে ধাক্কা লেগে যেতে পারে। কাউন্টারে পাঠানোর মতন কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না। সেজন্য, ওই মেয়েটি পেছনে দাঁড়িয়ে, আধা ঘন্টা অপেক্ষা করেছে। ভীড় কমার পরে, কাউন্টারে গিয়েছে। তার এই অপেক্ষা করাটা পর্দা।
এক কথায় পর্দা হলো নারীকে আড়ালে রাখার চেষ্টা। পর্দা শুধুমাত্র নারীর নয়। পুরুষদেরও পর্দা করার নির্দেশনা রয়েছে আর তা হলো – দৃষ্টি সংযত রাখা।
পর্দা ইসলামের আবিষ্কার নয়। পর্দা হলো আল্লাহর বিধান। আর এই বিধান কেউ অমান্য করলে বা অস্বীকার করলে তার ঈমান থাকবে না এবং গুনাহগার হবে। আল্লাহর বিধান পালন করা ফরজ। তবে সকল ধর্ম ও সমাজে, পর্দা হলো সম্মানিত নারীর লক্ষণ।

লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারপার্সন মহোদয়ের একান্ত সচিব, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ, ঢাকা, বাংলাদেশ।