Home আন্তর্জাতিক উত্তাপের ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারাল আর্জেন্টিনা

উত্তাপের ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারাল আর্জেন্টিনা


পরিক্রমা ডেস্ক : উত্তাপ ছড়ানো সুপার ক্লাসিকো ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারাল আর্জেন্টিনা। দলের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন নিকোলাস ওতামেন্দি।

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চম মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। আজ বুধবার ব্রাজিলের রিও দে জেনেইরোর ঐতিহ্যবাহী মারাকানা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ছয়টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল সুপার ক্লাসিকোর। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় নির্ধারিত সময়ে তা হয়নি।

ম্যাচের আগে ব্রাজিলের জাতীয় সঙ্গীত বাজছিল। তবে ঠিক ওই সময় স্ট্যান্ডে দুই দলের সমর্থকরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ দ্রুত ছুটে গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিল না। পুলিশের সঙ্গেও লেগে যায় দর্শকদের। জানা যায়, ব্রাজিল জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় আর্জেন্টিনা সমর্থকেরা দুয়ো দিলে তাদের ওপর আসন ছুড়ে মারতে শুরু করে সেলেকাও সমর্থকেরা। পরে পরিস্থিতি চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

লিওনেল মেসি উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে তার দল এবং মার্কিনিওস গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তবে বেশ খানিকটা সময় অপেক্ষা করে সতীর্থদের নিয়ে মাঠ ছাড়েন। সেসময় ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা অবশ্য ছিলেন মাঠেই। রেফারিদেরও অপেক্ষা করতে দেখা যায়। গ্যালারি ঠাণ্ডা হলে প্রায় আধ ঘণ্টা পর দল নিয়ে মাঠে ফিরেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক।

মাঠের লড়াইয়েও জড়িয়ে পড়েন দুই দলের খেলোয়াড়েরা। শুরুটা হয় রদ্রিগো এবং মেসিকে দিয়ে। একটু পর বাকিরাও সামিল হন। এমনকি খেলা শুরুর পরও একটুও কমেনি এর রেশ। ম্যাচটা যে গোলের এবং গোল করেই জিততে হবে সেটি যেন ভুলেই গিয়েছিলেন খেলোয়াড়েরা। ফাউল এবং কার্ডের ছড়াছড়ি ছিল শুরু থেকে। তবে ফাউল এবং কার্ড দেখায় যেমন ব্রাজিল এগিয়ে ছিল, তেমনি মাঠে বল পায়েও আধিপত্য ছিল ব্রাজিলেরই।

শর্ট পাস এবং নান্দনিক কিছু ড্রিবলিংয়ে মাঝ মাঠ ও অ্যাটাকিং থার্ডে ভীতি ছড়িয়েছেন রদ্রিগো-জেসুসরা। অন্য দিকে ম্যাচ শুরুর আগের ঘটনায় কিনা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার খেলায় ছিল না পরিকল্পনার কোনো ছাপ।

ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে রাফিনিয়া মাথায় একক প্রচেষ্টায় চমকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে রেফারি অফসাইড পতাকা উত্তোলন করলে থামতে হয় তাকে। ষষ্ঠ মিনিটে রিবাউন্ড থেকে বল পান জেসুস। তিনি চেষ্টা করেন রদ্রিগো দি পলকে ড্রিবল করে এগিয়ে যেতে কিন্তু তার হাত গিয়ে লাগে দি পলের মুখে। ফলাফল ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন জেসুস।

দুই দলের মধ্যে এই ঘটনায় ফের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যেও অবশ্য ব্রাজিল চেষ্টা করে আক্রমণে গিয়ে সুযোগ তৈরি করতে। তবে ১৩ মিনিটে দি পলকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন রাফিনিয়া। প্রথম ১৮ মিনিটে এদিন ব্রাজিল ফাউল করে ৮টি।

খেলার ২৬তম মিনিটে গিয়ে প্রথমবারের বল পায়ে আক্রমণে দেখা যায় মেসিকে। যদিও সেই আক্রমণে গোলের কোনো সম্ভাবনা তৈরি করতে পারেননি ইন্টার মায়ামি তারকা। ৩৩ মিনিটে অ্যালিসন বেকারের ট্রেডমার্ক পাস থেকে বল পেয়ে এগিয়ে যান গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি। দারুণভাবে নাহুয়েল মলিনা এবং দি পলকে ড্রিবল করলেও বক্সের কাছাকাছি গিয়ে আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি।

প্রথমার্ধে সব মিলিয়ে ২২টি ফাউল করেছে দুই দল। যেখানে ব্রাজিলের ১৬টি ফাউলের বিপরীতে আর্জেন্টিনার ফাউল ছিল ৬টি।

বিরতির পরও আর্জেন্টিনার অর্ধে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখে ব্রাজিল। একাধিকবার আক্রমণে গিয়ে সুযোগ তৈরিরও চেষ্টা করেছে তারা। যদিও রক্ষণদেয়াল ভাঙতে পারেনি তারা। ম্যাচের ৫৮তম মিনিটে মার্তিনেল্লির প্রচেষ্টা মার্তিনেজ দারুণভাবে ঠেকিয়ে না দিলে ম্যাচের প্রথম গোলটি পেয়েই গিয়েছিল ব্রাজিল। উল্টো খেলার ধারার বিপরীতে ম্যাচের ৬৩তম মিনিটে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। জিওভানি লো সেলসোর কর্নারে হেড দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন নিকোলাস ওতামেন্দি।

ম্যাচের ৭৮তম মিনিটে নিষ্প্রভ মেসিকে তুলে নিয়ে আনহেল দি মারিয়াকে নামায় আর্জেন্টিনা। ৮১ মিনিটে ব্রাজিলের বিপদ আরও বাড়ে জেয়েলিংটন লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে। ১০ জনের ব্রাজিল শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেও আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি।

লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইয়ে টানা চার জয়ের পর আগের ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। তবে আজ ব্রাজিলকে হারিয়ে জয়ে ফেরা লিওনেল স্কালোনির দল ছয় ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষ স্থান মজবুত করল আরও।

কিন্তু দুঃসময় আরো বাড়ল ব্রাজিলের। টানা তৃতীয় হারের তেতো স্বাদ পাওয়া ফের্নান্দো জিনিসের দল নেমে গেল ষষ্ঠ স্থানে। রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের জন্য বাছাইয়ের পথচলা কঠিন হয়ে গেল।