Home জাতীয় পবিত্র কোরআন সম্পর্কে বিজ্ঞানের আবিষ্কার- মোঃ রফিকুল ইসলাম

পবিত্র কোরআন সম্পর্কে বিজ্ঞানের আবিষ্কার- মোঃ রফিকুল ইসলাম

-মো: রফিকুল ইসলাম

মানুষ এই পৃথিবীর পাহাড়, পবর্ত, আকাশ, বাতাস, পশু, পাখি, নদনদী, গাছ পালা, এক কথায় সৃষ্টি জগত নিয়ে বহু জনে বহু গবেষণা করেছেন। ঐ সকল গবেষকদের মধ্যে কেউ ঈমান এনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। আবার কেউ তার পূর্বের যায়গায় রয়েছেন।

আল-কোরআনে পৃথিবীর গবেষণা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি ভূপৃষ্ঠে ভ্রমণ করে না, যাতে তারা জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারে! বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে তাদের হৃদয়।’ (সূরা হজ : ৪৬)।
মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘তবে কি তারা লক্ষ্য করে না উটের প্রতি, কীভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আকাশের প্রতি, কীভাবে তাকে উঁচু করা হয়েছে এবং পাহাড়সমূহের প্রতি, কীভাবে তাকে প্রথিত করা হয়েছে এবং ভূমির প্রতি, কীভাবে তা বিছানো হয়েছে’। (সূরা গাশিয়া ১৭-২০)। আরও বলা হয়েছে, ‘সৃষ্টি নিয়ে এক ঘণ্টা গবেষণা করা বছরের পর বছর ইবাদত করার চেয়েও বেশি মূল্যবান।’

পবিত্র কোরআনে ১০০ এরও বেশি আয়াতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে তারা যেন চিন্তা-ভাবনা করে, শোনে, মনোযোগ দেয়, তুলনা করে বা পরিমাপ করে, ভাবে, বুদ্ধি ও বিবেকের চর্চা করে এবং বিচার-বিবেচনা করে এবং বহু আয়াতের শেষাংশে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে: তোমরা কি চিন্তা করে দেখছো না? তোমরা কি তোমাদের জ্ঞান-বুদ্ধি একটুও কাজে লাগাও না? তারা কি কোরআন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে না?

আল্লাহ জিজ্ঞাসা করার পাশাপাশি বহু জায়গায় বিশ্বের বিচিত্র অজানা রহস্য নিয়ে ভাবতে, গবেষণা করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন আর যারা চিন্তাশক্তি, মেধা ও মননকে কাজে লাগায় না তাদের অন্ধ, বধির এমনকি চতুষ্পদ জন্তু কিংবা তাদের চেয়েও নিকৃষ্ট বলে তিরস্কার করা হয়েছে।

পবিত্র কোরআনের সূরা আরাফের ১৭৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: ‘আর এটি একটি অকাট্য সত্য যে, বহু জিন ও মানুষ এমন আছে যাদের আমি জাহান্নামের জন্যই সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না। তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না। তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা শোনে না। তারা পশুর মতো বরং তাদের চেয়েও অধম। তারা চরম গাফলতির মধ্যে হারিয়ে গেছে।’এতকিছুর পরও যারা বিবেক-বুদ্ধি, মেধা ও প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে কোনো বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না, তাদের অকর্মণ্য, উপলব্ধিহীন, অসচেতন প্রাণী বলে তিরস্কার করেছে।

সূরা আনফালে বলা হয়েছে: ‘আর তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না,যারা বলে যে, আমরা শুনেছি,অথচ তারা শোনে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলার নিকট সমস্ত প্রাণীর তুলনায় তারাই মূখ ও বধির,যারা উপলব্ধি করে না।’(সূরা আনফাল : ২১, ২২)
কোরআনের নির্দেশনা অমান্য করে যারা চিন্তারিক্ত হয়ে বসে থাকে, যারা নিজেদের বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে সৃষ্টি ও স্রষ্টার হাকিকত উপলব্ধি করার চেষ্টা করে না, কোরআন তাদের মনুষ্যত্বের মর্যাদা থেকেও বঞ্চিত করেছে। কারণ, মনুষ্যত্ব ও পশুত্বের পার্থক্যরেখা যে চিন্তাশক্তি তা না থাকলে মানবীয় মর্যাদাই তো বিলীন হয়ে যায়।

কোরআন মানুষের চিন্তাশক্তির প্রতিবন্ধক বিষয়গুলো নিষিদ্ধ করেছে। পূর্বসূরিদের অন্ধ অনুসরণ, গোঁড়ামি পরিহার করে ইসলামের উদার চিন্তা দর্শনের চর্চা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মানুষ জ্ঞান-গবেষণা, চিন্তা-ভাবনা, নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে উন্নতি জাতির পরিবর্তন করতে পারে।

মানুষের সঙ্গে অন্যান্য সৃষ্টির পার্থক্য হল,  বৈজ্ঞানিক চিন্তা-ভাবনা এবং উদ্ভাবনী শক্তির মধ্যে। মানুষ নতুন নতুন সৃষ্টি করতে পারে। আর এই উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানোর প্রণোদনা দেয়া হয়েছে হাদীসে। এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলে আকরাম (সা.) চেষ্টা করতেন পথচলার ক্ষেত্রে যে রাস্তা দিয়ে একবার গেছেন বিকল্প থাকলে সেই রাস্তায় না যেতে।

মানুষের উচিত প্রতিদিনই নতুন নতুন পথের সন্ধান করা। দুটি পথ থাকলে তৃতীয় পথ  কী করে তৈরি করা যায় তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। এই চিন্তাকে জাগানোর জন্যই বারবার আহ্বান করেছে কোরআন।

যারা বিবেক আর জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ভাবতে পারার ইতিবাচক পথকে অবলম্বন করে আর যারা করে না, যারা প্রজ্ঞা ও বিবেককে ব্যবহার করে আর যারা করে না, তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলছেন :‘বল, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান? (সূরা : আনআম : ৫০ )

যারা সত্যের জন্য বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগায় না, কোনোরূপ চিন্তা করে না, গবেষণা করে না তাদের কোরআনে মূখ, বধির, অন্ধ ইত্যাদি অভিধায় তিরস্কৃত করা হয়েছে। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না, নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ? (সূরা মুহাম্মদ : ২৪)

পবিত্র কালামে পাকের অমোঘ ঘোষণা- ‘নিশ্চয়ই মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টিতে এবং দিবা-রাত্রির আবর্তনের মধ্যে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং মহাকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে এবং বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! এ সবকিছু তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সব পবিত্রতা একমাত্র তোমারই। আমাদের তুমি দোজখের শাস্তি হতে বাঁচাও। (সূরা আল-ইমরান ১৯০-৯১)

আল্লাহর স্মরণ ও সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা ও গবেষণার কারণেই অন্যান্য সৃষ্টির ওপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব। অতএব মহাগ্রন্থ আল কোরআন চিন্তা ও গবেষণায় বিবেকবোধকে কার্যকর করার পয়গাম দিয়েছে। অনুভব ও উপলব্ধিকে কাজে লাগাতে বলেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে নবী! বলে দাও, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, তার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করো।’ (সূরা ইউনুস, আয়াত ১০১)

প্রকৃতি নিয়ে, সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে, মহাজাগতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভেবে না দেখাকে আল্লাহ তায়ালা তিরস্কার করেছেন। কোরআনের ঘোষণা- ‘তারা কি নিজেদের অন্তরে ভেবে দেখে না, আল্লাহ আসমান ও জমিন এবং এ দুয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুই যথাযথভাবে ও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সৃষ্টি করেছেন। (সূরা রুম, আয়াত ৮)

তাই গবেষণা ও চিন্তাচর্চা ছাড়া ইহ বা পরকাল কোথাও সফলতার আশা করা যায় না। গবেষণা ও চিন্তাশীলতা ছাড়া পৃথিবীর কোনো জাতি সমৃদ্ধ হতে পারেনি। চিন্তা গবেষণার কল্যাণে পৃথিবী আজ এতদূর এগিয়েছে।

পরিশেষে আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের আমাদের পান্ডুলিপি আল্লাহর দলিল পেয়েও আমরা অন্যান্য ধর্মালম্বীদের মতো আগাতে পারছি না।

লেখক : একান্ত সচিব, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ, ঢাকা, বাংলাদেশ।