Home রাজনীতি ঐক্যফ্রন্টের ভরসা দেশের জনগণ

ঐক্যফ্রন্টের ভরসা দেশের জনগণ


বিশ্ববিদ্যায়ল পরিক্রমা ডেস্ক: জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের ভরসা দেশের জনগণ তথা সর্বস্তরের ভোটার। যাঁরা অতীতে কখনো সময়ের সাহসী ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি তাঁরা এবারও ভুল করবেন না। সব ধরনের ভয়ভীতিকে তুচ্ছজ্ঞান করে ঐক্যবদ্ধভাবে বীরের মতো ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হবেন তাঁরা। এ দেশের সংগ্রামী জনতা ৩০ ডিসেম্বরের ভোটযুদ্ধে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে চলমান আগ্রাসন মোকাবেলাপূর্বক তাঁদের মূল্যবান ভোট প্রয়োগ করবেন গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য, দেশের মালিক জনগণ—সে মালিকানা ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে, আমাদের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার দৃঢ় প্রত্যয়ে।’

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ড. কামালের পক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। ড. কামালের পক্ষে এই বিবৃতি পাঠান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমিটির আহ্বায়ক জগলুল হায়দার আফ্রিক। এই বিবৃতি পুরানা পল্টনে জামান টাওয়ারের সামনে সাংবাদিকদের কাছে পড়ে শোনান তিনি।

ড. কামাল বিবৃতিতে বলেন, ‘দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ৩০ ডিসেম্বর ভোটারদের নিরাপদে ভোট দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেবে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাদের কাছে সে প্রত্যাশাই করছে।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী, নেতাকর্মী-সমর্থকদের মাঠে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। ঐক্যফ্রন্টকে প্রচারণায় নানাভাবে বাধা দেওয়া ও গণগ্রেপ্তারের বিষয়টি আজ সবার জানা। তার পরও ভোটাররা কিন্তু থেমে নেই। তারা নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিয়ে যার যার এলাকায় ফিরে গেছেন ১০ বছর পর তাঁদের কাঙ্ক্ষিত ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য। তাঁরা মূলত ভোট উৎসবের অপেক্ষায়। তাই যতই বাধা দেওয়া হোক না কেন, এই ভোটারদের কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি রাজধানী ঢাকার রাস্তাঘাট প্রায় খালি হয়ে গেছে। সবাই স্ব-উদ্যোগে নিজ নিজ এলাকায় চলে গেছেন, ভোট উৎসবে অংশ নেওয়ার জন্য।’

ড. কামাল বলেন, প্রার্থী-নেতাকর্মী-সমর্থকদের ওপর দমন-পীড়ন কিন্তু থেমে নেই। সহিংসতা চলছেই। চলমান সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। নির্বাচনের দিন ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কা করছেন স্বয়ং মার্কিন রাষ্ট্রদূত। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিবও। তাঁদের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে ভোটের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য। কিন্তু ভীতিকর অবস্থার কাঙ্ক্ষিত উন্নতি বা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল জাতির উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন, সাহস করে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট বিপ্লবে অংশ নেওয়ার জন্য। বারবার নির্বাচন কমিশনকে বলার পরও পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আক্রমণাত্মক ভূমিকার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি, বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে আক্রমণের ধরন। এদিকে ইন্টারনেটের গতি না কমানোর একাধিকবার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও তা মানা হচ্ছে না। নির্বাচনের দিন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নির্বাচনসংক্রান্ত সার্বিক খবরাখবর দ্রুত জানার স্বার্থে ফোরজি সচল রাখার আহ্বান আবারও জানাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, নির্বাচনের দিন অ্যাম্বুল্যান্স প্রস্তুত রাখার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনৈক কর্মকর্তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নির্দেশ প্রমাণ করে সেদিন রক্তক্ষয়ী পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা অথবা জনমনে ভীতিসঞ্চার করার

জন্য এসব বলা হচ্ছে। এতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী-নেতাকর্মী-সমর্থকরা মোটেও ভীত নয়। ভোটাররাও ভয় পাবে না, বরং তারা সব কিছুকে তুচ্ছ প্রমাণ করে ৩০ ডিসেম্বর ভোট বিপ্লব ঘটানোর মিছিলে শামিল হয়ে কাঙ্ক্ষিত বিজয়ে অবদান রাখবে বলে ঐক্যফ্রন্টের দৃঢ়বিশ্বাস।

এতে আরো বলা হয়, তফসিল ঘোষণার দিন কারাগারে ছিল ৯০ হাজার বন্দি। অথচ গতকাল দাঁড়ায় ৯৭ হাজারে। বর্তমানে সেটা বেড়ে লক্ষাধিক। এরই মধ্যে মামলা হয়েছে ৮৪৪টি, আহত হন ১৩ সহস্রাধিক, নিহত ৯ জন, হামলা হয়েছে দুই হাজার ৮৯৬টি। দিন দিন এ পরিসংখ্যান জ্যামিতিক হারে বাড়ছেই। গতকাল রাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারা দেশে চিরুনি অভিযান চালিয়ে ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের যেখানেই পেয়েছে গণহারে গ্রেপ্তার করেছে। গণগ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে দেশের কারাগারগুলোকে ঐক্যফ্রন্ট নেতাকর্মীদের দিয়ে ভরে ফেলা হচ্ছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রায় দুই ডজন প্রার্থী কারাগারে। তাঁরা হলেন নরসিংদী-১ খায়রুল কবীর খোকন, কুমিল্লা-১০ মনিরুল হক চৌধুরী, গাজীপুর-৫ ফজলুল হক মিলন, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিউর রহমান, টাঙ্গাইল-২ সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, চট্টগ্রাম-৯ ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম-৪ আসলাম চৌধুরী, গোপালগঞ্জ-৩ এস এম জিলানী, রাজশাহী-৬ মো. আবু সাঈদ চাঁদ, মাগুরা-১ মো. আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম-১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাম্মদ আবদুল খালেক, খুলনা-৬ আবুল কালাম আজাদ, ঠাকুরগাঁও-২ মাওলানা আবদুল হাকিম, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া-১ রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা, যশোর-২ আবু সাঈদ মো. শাহাদাত।

আদালতের মাধ্যমে যাঁদের প্রার্থিতা বাতিল ও স্থগিত করা হয়েছে, সেসব আসন ও প্রার্থীরা হলেন—নরসিংদী-৩ মঞ্জুর এলাহী, নাটোর-৪ আব্দুল আজিজ, গাইবান্ধা-৪ ফারুক আলম, চাঁদপুর-৪ আলহাজ আবদুল হান্নান, জামালপুর-১ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, মানিকগঞ্জ-৩ আফরোজা খান রিতা, সিলেট-২ তাহমিনা রুশদী লুনা, মানিকগঞ্জ-১ এস এ জিন্নাহ, নাটোর-১ মঞ্জুরুল ইসলাম, নওগাঁ-১ ডা. খালেক, রাজশাহী-৫ নাদিম মোস্তফা, বগুড়া-৩ মুহিত তালুকদার, কক্সবাজার-২ আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ, ময়মনসিংহ-১ আলী আসগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ ইঞ্জিনিয়ার সেলিম উদ্দিন, দিনাজপুর-৩ মো. জাহাঙ্গীর আলম, জয়পুরহাট-১ ফজলুর রহমান, বগুড়া-৭ মোরশেদ মিল্টন, রাজশাহী-৬ আবু সাঈদ চান, ঝিনাইদহ-২ আবদুল মজিদ, জামালপুর-৪ শামিম তালুকদার, ঢাকা-১ খন্দকার আবু আশফাক, ঢাকা-২০ তমিজ উদ্দিনসহ আরো অনেক আসন ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীশূন্য। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যৌক্তিক দাবি সত্ত্বেও এসব আসনে পুনঃ তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে না।

ড. কামাল বলেন, এত কিছুর পরও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার এমন কোনো চেষ্টা নেই, যা করা হচ্ছে না। দেশব্যাপী চলছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী-নেতাকর্মী-সমর্থকদের ওপর একতরফা বর্বর হামলা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, প্রচারে বাধা, দলীয় অফিস ও নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুর অব্যাহত। ধানের শীষের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা চলছেই। আজ (গতকাল) সকালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের লালমাটিয়ার বাসায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা আলালের স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে। এ সময় মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাসায় ছিলেন না।

তিনি আরো বলেন, তফসিল ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ সহস্রাধিক ঐক্যফ্রন্ট নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এভাবে ঢালাও আটকের মধ্য দিয়ে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষ প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টদের টার্গেট করে গ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে। নির্বাচন কেন্দ্রে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর এজেন্টশূন্য রাখার অপরিণামদর্শী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গ্রেপ্তার অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য। ধরপাকড়ের নামে ক্ষমতাসীনদের নীলনকশা বাস্তবায়নের এমন অশুভ কার্মকাণ্ড থেকে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে অবিলম্বে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বৃহস্পতিবার রাত থেকে চিরুনি অভিযানে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ অভিযানের মাধ্যমে তারা ঐক্যফ্রন্ট নেতাকর্মী-সমর্থকদের টার্গেট করে আটক করছে। যেখানে যাকে পেয়েছে তাকেই আটক করে নিয়ে গেছে। এভাবে দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্ততার চালিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে রাখা যাবে না।

এতে আরো বলা হয়, ‘দেশবাসী ও ভোটাদের প্রতি আবারও আমার আকুল আবেদন, ৩০ ডিসেম্বর ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দ্বিধাহীন চিত্তে আপনার মূল্যবান ভোট প্রয়োগ করে দেশের স্বাধীনতা এবং আপনাদের মালিকানা নিশ্চিত করবেন। দেশবাসীর প্রতি এটাই আমার প্রত্যাশা।’